Dhaka ০৯:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নীলফামারীর ডিমলায় ভিজিডি কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:৫৯:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ৪৩৩ Time View
নীলফামারীর ডিমলায় ভিজিডি কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। 
মোঃ হাবিবুল হাসান হাবিব, ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি-
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নে ২০২৩-২৪ইং অর্থবছরে ভালনারেবল উইমেন বেনেফিট (ভিডব্লিউবি) কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ভিজিডি কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সদ্য প্রকাশিত অত্র ইউনিয়নের ৩৬৬ টি ভিজিডির চুড়ান্ত তালিকা তৈরীতে একাধিক নামের তালিকায় অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে চুড়ান্ত তালিকা করে টাকার বিনিময়ে তালিকায় নাম যোজন করেন সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য দুলাল হোসেনসহ  অন্যান্য ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যগণ। এতে বাদ পড়েন প্রকৃত দুস্থ, অসহায় ও পঙ্গুরা। ভিজিডি কার্ডের বিনিময়ে একাধিক ব্যক্তির নিকট থেকে ২/৩  হাজার করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অনলাইনে আবেদন করেও লটারীর নামে তালিকা তৈরী করে গরীব ও  প্রকৃত দুস্থ্যদের বঞ্চিত করে বিত্তবান লোকজনেরা তালিকায় ঠাঁই  পেয়েছেন এবং অসচ্ছল, অসহায়দের পরিবর্তে ৩/৫ বিঘা জমিজায়গা, পাঁকা দালান বাড়ি, গরুর খামার, পাওয়ার টিলার, মোটরসাইকেলসহ ব্যবসা করে এমন ব্যক্তিরাই টাকার বিনিময়ে ভিজিডি কার্ডের নামের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অত্র ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য দুলাল হোসেন তার স্ত্রী রোকেয়া বেগমের নামসহ অপর ভাই বেলাল হোসেন, জালাল হোসেন, চাচাতে ভাই সাজু ইসলামের স্ত্রীদের নামে ভিজিডি কার্ড করে দেয়। তাদের প্রত্যেকের জমিজায়গাসহ পাঁকা দালান বাড়ি, গাড়ি ও গরুর খামার রয়েছে। একই এলাকার সাধণা রানী- স্বামী ঝড়ুলাল রায়, উষা রানী- স্বামী বুদ্ধদেব রায়, গোলাপী বেগম, স্বামী-  জাহাঙ্গীর আলমসহ তালিকায় নাম থাকা ৩৯ জনের মধ্যে অধিকাংশ নামধারীদের প্রত্যেকের জমিজায়গাসহ  পাঁকাবাড়ি, গাড়ী ও গরুর খামার রয়েছে। শুধুমাত্র ওই ওয়ার্ডে নয় বরং সকল  ওয়ার্ডেই ভিজিডি কার্ড বিতরণে একই অবস্থা।
ভিজিডি কার্ডের নির্দেশনামূলক বিধিমালায় বলা হয়েছে তালিকায় ১ম  অগ্রাধিকার পাবেন স্বামীহারা দুস্থ নারী, ২য় পরিবারের প্রধান নারী, যার অন্য কোন আয়ের উৎস নেই, ৩য় ১৫ শতকের কম জমির মালিক, ৪র্থ বসত বাড়ির অবস্থান খারাপ বা দিন দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করে এমন পরিবার। উল্লেখ্য কোন অবস্থাতেই স্বচ্ছল পাকা বাড়ির মালিকের স্ত্রীর নাম অন্তর্ভূক্ত করা যাবেনা। সরকারি ওই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত স্বার্থ, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে চুড়ান্ত তালিকায় স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। ইউপি সদস্য দুলাল হোসেনর স্ত্রী রোকেয়া বেগমকে ভিজিডি কার্ডের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,  মেম্বার মানষি (মানুষ) কি ভিজিডি কার্ড নেয়? রোকেয়া তো আমারে (আমার) নাম। আমি কোবার (বলতে) পাই (পারি) না। কার্ড হয়েছে কিনা মুই (আমি) কোবার (বলতে) পাই (পারি)  না।
ইউপি সদস্য দুলাল হোসেনের সাথে সংবাদকর্মীর এবিষয়ে সরাসরি কথা হলে তিনি জানান আমার স্ত্রী রোকেয়া বেগমের নাম দেওয়া আছে তবে আমার স্ত্রীর নামটা দেওয়াটা ভুল হয়েছে। আমার পাশের বাড়ির একজনকে উঠে (চাল উঠিয়ে) দিব বলে আমার স্ত্রীর নাম দিয়েছি। তিনি আরো জানান আমার সহোদর ভাই বেলাল হোসেন ও জালাল হোসেনের স্ত্রীর নাম দিয়েছি।
বালাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, যেটা ফল্ট (ত্রুটি-বিচ্যুতি) পাব সেটা কাটি (কেঁটে) দিব অথবা ওটা লিখে নিয়া ওর পাশে কারা পাবার (পাওয়ার) যোগ্য তাকে দিব। তদন্ত কমিটি চুড়ান্ত যে লিস্ট (তালিকা) আমাকে দিয়েছে সেটা আমি চুড়ান্ত করেছি। কারণ মেম্বাররা দিছে (দিয়েছে) আমরা নিজেরাও একটু তদন্ত করেছি কিছু ফল্ট (ত্রুটি-বিচ্যুতি) হয়েছে। খালি শুধু এখানে হয় যে, না তার সব জায়গায় কিছু না কিছু। এখন ঐ ওয়ার্ডের মেম্বার ধরা খাক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। যদি কোন উপকারভোগীর নামে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে উপজেলা কমিটি অবশ্যই তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বোয়ালমারীতে চার বছর কর্মস্থলে না গিয়েও বেতন ভাতা নিচ্ছে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঝুমা !

নীলফামারীর ডিমলায় ভিজিডি কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

Update Time : ০৮:৫৯:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
নীলফামারীর ডিমলায় ভিজিডি কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। 
মোঃ হাবিবুল হাসান হাবিব, ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি-
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নে ২০২৩-২৪ইং অর্থবছরে ভালনারেবল উইমেন বেনেফিট (ভিডব্লিউবি) কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ভিজিডি কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সদ্য প্রকাশিত অত্র ইউনিয়নের ৩৬৬ টি ভিজিডির চুড়ান্ত তালিকা তৈরীতে একাধিক নামের তালিকায় অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে চুড়ান্ত তালিকা করে টাকার বিনিময়ে তালিকায় নাম যোজন করেন সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য দুলাল হোসেনসহ  অন্যান্য ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যগণ। এতে বাদ পড়েন প্রকৃত দুস্থ, অসহায় ও পঙ্গুরা। ভিজিডি কার্ডের বিনিময়ে একাধিক ব্যক্তির নিকট থেকে ২/৩  হাজার করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অনলাইনে আবেদন করেও লটারীর নামে তালিকা তৈরী করে গরীব ও  প্রকৃত দুস্থ্যদের বঞ্চিত করে বিত্তবান লোকজনেরা তালিকায় ঠাঁই  পেয়েছেন এবং অসচ্ছল, অসহায়দের পরিবর্তে ৩/৫ বিঘা জমিজায়গা, পাঁকা দালান বাড়ি, গরুর খামার, পাওয়ার টিলার, মোটরসাইকেলসহ ব্যবসা করে এমন ব্যক্তিরাই টাকার বিনিময়ে ভিজিডি কার্ডের নামের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অত্র ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য দুলাল হোসেন তার স্ত্রী রোকেয়া বেগমের নামসহ অপর ভাই বেলাল হোসেন, জালাল হোসেন, চাচাতে ভাই সাজু ইসলামের স্ত্রীদের নামে ভিজিডি কার্ড করে দেয়। তাদের প্রত্যেকের জমিজায়গাসহ পাঁকা দালান বাড়ি, গাড়ি ও গরুর খামার রয়েছে। একই এলাকার সাধণা রানী- স্বামী ঝড়ুলাল রায়, উষা রানী- স্বামী বুদ্ধদেব রায়, গোলাপী বেগম, স্বামী-  জাহাঙ্গীর আলমসহ তালিকায় নাম থাকা ৩৯ জনের মধ্যে অধিকাংশ নামধারীদের প্রত্যেকের জমিজায়গাসহ  পাঁকাবাড়ি, গাড়ী ও গরুর খামার রয়েছে। শুধুমাত্র ওই ওয়ার্ডে নয় বরং সকল  ওয়ার্ডেই ভিজিডি কার্ড বিতরণে একই অবস্থা।
ভিজিডি কার্ডের নির্দেশনামূলক বিধিমালায় বলা হয়েছে তালিকায় ১ম  অগ্রাধিকার পাবেন স্বামীহারা দুস্থ নারী, ২য় পরিবারের প্রধান নারী, যার অন্য কোন আয়ের উৎস নেই, ৩য় ১৫ শতকের কম জমির মালিক, ৪র্থ বসত বাড়ির অবস্থান খারাপ বা দিন দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করে এমন পরিবার। উল্লেখ্য কোন অবস্থাতেই স্বচ্ছল পাকা বাড়ির মালিকের স্ত্রীর নাম অন্তর্ভূক্ত করা যাবেনা। সরকারি ওই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত স্বার্থ, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে চুড়ান্ত তালিকায় স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। ইউপি সদস্য দুলাল হোসেনর স্ত্রী রোকেয়া বেগমকে ভিজিডি কার্ডের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,  মেম্বার মানষি (মানুষ) কি ভিজিডি কার্ড নেয়? রোকেয়া তো আমারে (আমার) নাম। আমি কোবার (বলতে) পাই (পারি) না। কার্ড হয়েছে কিনা মুই (আমি) কোবার (বলতে) পাই (পারি)  না।
ইউপি সদস্য দুলাল হোসেনের সাথে সংবাদকর্মীর এবিষয়ে সরাসরি কথা হলে তিনি জানান আমার স্ত্রী রোকেয়া বেগমের নাম দেওয়া আছে তবে আমার স্ত্রীর নামটা দেওয়াটা ভুল হয়েছে। আমার পাশের বাড়ির একজনকে উঠে (চাল উঠিয়ে) দিব বলে আমার স্ত্রীর নাম দিয়েছি। তিনি আরো জানান আমার সহোদর ভাই বেলাল হোসেন ও জালাল হোসেনের স্ত্রীর নাম দিয়েছি।
বালাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, যেটা ফল্ট (ত্রুটি-বিচ্যুতি) পাব সেটা কাটি (কেঁটে) দিব অথবা ওটা লিখে নিয়া ওর পাশে কারা পাবার (পাওয়ার) যোগ্য তাকে দিব। তদন্ত কমিটি চুড়ান্ত যে লিস্ট (তালিকা) আমাকে দিয়েছে সেটা আমি চুড়ান্ত করেছি। কারণ মেম্বাররা দিছে (দিয়েছে) আমরা নিজেরাও একটু তদন্ত করেছি কিছু ফল্ট (ত্রুটি-বিচ্যুতি) হয়েছে। খালি শুধু এখানে হয় যে, না তার সব জায়গায় কিছু না কিছু। এখন ঐ ওয়ার্ডের মেম্বার ধরা খাক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। যদি কোন উপকারভোগীর নামে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে উপজেলা কমিটি অবশ্যই তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।