মোঃ জাহিদুল ইসলাম (জাহিদ) কালাই (জয়পুরহাট)
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই বাজার এলাকায় লুৎফর রহমান নামে এক হত দরিদ্র ও অচল শারীরিক প্রতিবন্ধীর জমি জবর দখলের নানা অপতৎপরতার অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। প্রতিবন্ধী লুৎফর রহমান অভিযোগে জানান, তিনি কর্মহীন, অচল ও দরিদ্র হওয়ায় এলাকার বিত্তবান প্রভাবশালীরা ভূয়া কাগজ পত্র তৈরী করে লুৎফরের ওই জমি দখলের জন্য হুমকি-ধামকি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শনসহ নানা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অভিযুক্তরা হলেন- মাত্রাই বাজারের পার্শ্ববর্তী শাইলগুন গ্রামের মৃত নূরুজ্জামানের ছেলে এনামুল হক ও মৃত আশরাফ আলীর ছেলে রাশেদুল ইসলাম, মাত্রাই বাজার এলকার মঞ্জু তালুকদার ও লুৎফরের নিকটত্মীয়া আকলিমা বেগম।
লুৎফর অভিযোগ করে জানান, তিনি কেনা সম্পত্তিতে বাড়িঘর নির্মান করে সেখানে বসবাসের দীর্ঘ প্রায় ২ যুগ পর এলাকার ওই অভিযুক্ত বিত্তবান ও প্রভাবশালীরা লৎফরের পরিবারকে তার বসত ভিটা থেকে উচ্ছেদ কওে ওই সম্পত্তি জবর দখলের জন্য নানা ভাবে ভয়-ভীতি দেখিয়ে যাচ্ছেন ।
সরেজমিনে জানা যায়, জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল মাত্রাই বাজার অতিতে মফস্বল হওয়ায় সেখানে জমির মূল্য ছিল খুব কম । কিন্তু বর্তমানে ব্যাবসা-বানিজ্য. হাট-বাজার যোগাযোগ ও বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠায় এই বাজার এলাকার জমির মূল্যমান অনেক বেড়েছে। ১৯৯০ সালের দিকে একই এলাকার আহম্মদ আলী আলী নামে এক ব্যাক্তির নিকট থেকে লুৎফর ও তার স্ত্রী সাহেরা বেগম কোবালা দলিল মূলে ৩৫ শতক জমি কিনেন । ওই সময়ে সেখানে বসত বাড়ি ও দোকান ঘর নির্মান এবং বাঁশ ঝাড় স্থাপন ও গাছ-গাছালী লাগিয়ে করে বসবাস করা অবস্থায় লুৎফর পক্ষাঘাত গ্রস্থ হয়ে পঙ্গুত্ব বরন করেন। সে সময় মাত্রাই বাজার এলাকায় এই জমির মূল্য খুবই কম হলেও এলাকাটি উন্নত হওয়ায় এর বর্তমান মূল্য প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। আর তাই দরিদ্র ও প্রতিবন্ধী লুৎফরের জমিতে প্রভাবশালীদের লোভ পড়েছে বলেও অভিযোগ ভূক্তভোগী পরিবারটির।
লুৎফরের স্ত্রী সাহেরা জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ লুৎফর রহমান চলাফেরা করতে পারেন না বলে অর্ধাহারে-অনাহারে তাদের জীবন চলছে বলে জানান লুৎফরের স্ত্রী সাহেরা। এ অবস্থায় অভিুক্তরা বসত ভিটা থেকে লুৎফরের পরিবারকে উচ্ছেদ করে জবর দখলের জন্য ভয়-ভীতি প্রদর্শন করলে আদালতে মামলা করেন ভূক্তভোগী লুৎফর। এতে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন অভিযুক্তরা।
অপর দিকে বিচারের জন্য আদালতে তারিখের পর তারিখ ধর্না দিতে গিয়ে ও অর্থাভাবে হাঁপিয়ে উঠা দরিদ্র লুৎফর দম্পতি আর পারছিলেন না কুলিয়ে উঠতে। উপায়ন্তর না দেখে সাহায্য চান আকলিমা বেগম নামে তাদের এক নিকটাত্মীয়ের কাছে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে মূল্যবান সম্পত্তির লোভে ওই প্রভাশালীদের সাথে যোগসাজোসের অভিযোগ ওঠে আকলিমার বিরুদ্ধেও।
প্রতিবেশী রশিদুল ইসলাম, মামুনুর রশিদ, শেফালী বেগমসহ এলাকার অনেকেই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, প্রায় ২ যুগেরও বেশী সময় ধরে এই জায়গাটি দলিল মূলে কিনে তখন থেকে বসবাস করে আসছেন। সে সময়ে লফর যে টিনের ঘর করেন এখন তাও বেশ পুরানো হয়ে জং ধরে গেছে। তারপরও কেবল মাত্র অধিক মূল্যমানের জমি হওয়ায় অভিযুক্তরা জবর দখলের পাঁয়তারা করছেন বলেও জানান এলাকাবাসী ।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্তদের মধ্যে এনামুল হক ও রাশেদুল ইসলামকে পাওয়া না গেলে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তারা ফোন ধরেননি। মঞ্জু তালুকদার জানান, সম্পত্তিতে তার বৈধতা রয়েছে। আর আকলিমা বেগমের সাথে দেখা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে আত্মপক্ষ সমর্থন করে জানান, তিনি দানপত্র মূলে ওই মধ্যে কিছু অংশের দাবীদার।
এক দিকে বিচারের দীর্ঘ সূত্রিতা অন্যদিকে অনাহার-অর্ধাহারে ভাঙ্গা বাড়ি-ঘরে বসবাস করা হত দরিদ্র প্রতিবন্ধী লুৎফর এখন দ্বাড়িয়ে আছেন জীবন-মৃত্যুর মাঝাখানে। এ অবস্থায় ভিটা ছাড়া করতে পারে প্রবল ক্ষমতাধররা, এমন অভিযোগ পাওয়ায় নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
কালাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ ই এম মঈন উদ্দীন জানান, ‘বিচার বহির্ভূত ভাবে অসহায় লুৎফরের পরিবারকে কেউ যাতে জবর দখল বা উচ্ছদ করতে না পারে সে ব্যাপারে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।