সারাবিশ্বে বাংলাদেশ যে কয়েকটি বিষয় নিয়ে গর্ব করে তার মধ্যে অন্যতম রয়েল বেঙ্গল টাইগার। কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় প্রাণী বাঘ আজ বিলুপ্তপ্রায়।
বাঘ কর্ডাটা পর্বের ম্যামেলিয়া শ্রেনীর একটি মাংসাশী প্রানী।অনেক দেশে এটি বড় বিড়াল নামেও বেশ পরিচিত।সাধারনত গায়ে ডোরাকাটা দাগ থাকে যাহা বাঘের অন্যতম একটি ফিগার বহন করে,এই দাগ দেখে একটি বাঘকে আলাদাভাবে চেনা যায়।একটি বাঘ প্রায় ৭ টি স্রীর সাথে সংসার করতে পারে।একটি পুরুষ বাঘ অনেক অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করতে পারে। বাঘ নিজেই রাজার মতো বনে অবস্থান করে, অন্য কোনো পুরুষ বাঘ যাতে নতুন করে বনে আসতে না পারে,প্রয়োজনে নিজের বাচ্চাকে ও খেয়ে ফেলে। একটি বাঘ একটি অঞ্চল জুড়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে কি, না -তা ডিপেন্ড করবে তার থেকে শক্তিশালী বা দুর্বল বাঘের উপর। বাঘ নিজের অস্তিস্থ জানান দিতে বড় গাছের উপর পায়ের নক দিয়ে দাগ তৈরী করে দেয়,যার দাগ যত উপরে, সে তত শক্তিশালী বাঘ। বনের কোনো নতুন স্থানে কোনো বাঘ মাইগ্রেশন হলে গাছে গাছে পায়ের দাগ লক্ষ করে।যদি দেখে দাগ তার নিজের করা দাগ থেকে কাছে,তাহলে সেখানে থেকে যায়।চর যদি তার থেকে দুরে হয়, তাহলে নিজেকে দুর্বল ভেবে ঐ স্থান ত্যাগ করে। বাঘ সাধারণত হরিণ শিকার করে।সুযোগ পেলে মানুষ ও শিকার করতে ভয় করে না।২০১৫ সালে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ১০৬ টি যেখানে ২০১৮ সালেহয় ১০৬ টি। পুরুষ বাঘের পায়ের ছাপ আয়তাকার আর মহিলা বাঘের পায়ের ছাপ বর্গাকার।একটি বাঘ ১২ বছর পর্যন্ত দাঁতকে ধরে রাখতে পারে,এর পর আর ধরে রাখতে পারে না, ফলে নিজের অস্তিত্ব আর রাখতে পারে না। বাঘের থাবা অনেক ধারালো।কাউকে একবার থাবা দিলে খুব সহজেই বস হয়ে যায়।বাঘের গর্জন খুবই ভয়ংকর। প্রতিদিন প্রায় ৪০ কেজি মাংস খেতে পারে।বিড়াল পানি দেখে ভয় পেলেও বাঘ পানিতে সাঁতার কেটে বিপরীতে যেতে পারে।পৃথিবীতে বেশ কয়েকটি দেশের বিভিন্ন বনে বাঘ আছে।ইতোপূর্বে পৃথিবীতে ৯ প্রজাতির বাঘ থাকলেও ৩ টি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।এভাবে বিলুপ্ত হতে থাকলে এক সময় হয়তো বাঘের” গন”টাই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।বাংলাদশের সুন্দরবনে একমাত্র বাঘের আবাসস্থল।বিশ্বের ছোট দেশ হিসেবে বাংলাদেশে বাঘের অস্তিত্ব আছে এটাই অনেক কিছু।কিন্তু সুন্দরবনের ও বাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় প্রাণী বাঘ আজ বিলুপ্তপ্রায়। দশ-বার বছর আগেও সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০টি, কমতে কমতে তা এখন ১০৬টিতে দাঁড়িয়েছে। এ হিসাব বন বিভাগের। বাঘ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বন বিভাগের কর্মকর্তারা দোষারোপ করেই চলছে চোরাচালানীদেরকে।
এ ছাড়া সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌযানের পাশাপাশি আশপাশে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্প-কারখানা নির্মাণের কারণে বাঘের অস্তিত্ব হুমকির মধ্যে পড়েছে বলে মনে করেন তাঁরা।বাঘকে সংরক্ষণ করার এটাই উপযুক্ত সময়।এই সময় কাজে না লাগাতে পারলে হয়তো এমন এক সময় আসবে যে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বইয়ে পড়বে এক সময় বাংলাদেশেও বাঘ ছিল কিন্তু কালের গর্ভে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সময় থাকতে বাঘ সংরক্ষণের প্রদক্ষেপ নিতে হবে।প্রথমত সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রকে ঠিক রাখতে হবে।বাস্তুতন্ত্র একটি বায়োলজিক্যাল ইকোসিস্টেম, যেখানে থাকবে উৎপাদন, খাদক ও বিয়োজক।এখানে উৎপাদক হলো সবুজ উদ্ভিদ, যারা নিজের খাদ্য নিজেই তৈরী করতে পারে।আর খাদক বলতে বিভিন্ন স্তরের প্রানী ও কিট পতঙ্গদের বুঝায়।কয়েকটি স্টেপের খাদক নিয়ে খাদ্য শিখল গঠন করে, আবার অনেক গুলা খাদ্য শিখল নিয়ে গঠন করে খাদ্য জাল।কোন খাদকের মৃত্যু হলে বিয়োজক হিসেবে ব্যাকটেরিয়া সেই মৃত্যুদেহকে পচিয়ে হিউমাসে পরিনত করে।আমাদের সুন্দরবনে সবুজ উদ্ভিদের মধ্যে সুন্দরী, গরান, গোলপাতা, হোগলাপাতা,পশুর,বাইন ইত্যাদি উদ্ভিদ উৎপাদক।আর উৎপাদকে খায় হরিণ ও অন্যান্য প্রানী।হরিণকে শিকার ধরে খায় বাঘ।এছারা মাংসল দেহ বিশিষ্ট অনেক প্রানী বাঘের খাবারে থাকে।বনে কোন কারনে যদি হরিণের সংখ্যা কমে যায় তাহলে বাঘ খাদ্যে সংকটে পড়বে,আর হরিনেরসংখ্যা ঠিক থাকলে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।তাহলে বুঝতে আর দেরি নেই যে সুন্দরবনের পরিবেশ ঠিক রাখতে হবে।
সুন্দরবনের ইকোসিস্টেমকে ঠিক রাখতে হবে কারন পরিবেশ যে খাদকের বিপক্ষে গেলে তারা টিকে থাকতে পারবে না ফলে বাঘের জন্য অনেক প্রতিকুলতার সৃষ্টি হবে।বাঘকে বাঁচাতে হলে আগে তার ইকোসিস্টেম অথ্যাৎ সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হবে।বাঘের আবাসস্থল ধ্বংশ যাতে না হয় সেই ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। জ্বালানি ও আসবাবপত্রের জন্য যাতে সুন্দরবনের গাছ না কাটা হয়, সেদিকে নজরদারি বাড়াতে হবে।বাঘের পরিবেশ ঠিক রাখতে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে এবং জন সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।স্থানীয়দের নিয়ে করা হবে কমিটি। ওই কমিটি সুন্দরবন এলাকায় সারাক্ষণ টহল দেবে। বন অধিদপ্তর, কোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধনে গঠন করা হবে যৌথ টাস্কফোর্স।
এ ছাড়া সুন্দরবন ও বাঘ সংরক্ষণের লক্ষ্যে বননির্ভর জনগোষ্ঠীর জন্য পরিবেশ সহায়ক জীবিকার ব্যবস্থাও করা হবে। বন্য প্রাণীর পাচার বন্ধে গঠন করা হবে ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট। এ কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে সরকারকে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা দেবে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় সংস্থা ইউএসএআইডি। ‘বাঘ সংরক্ষণ’ শিরোনামের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইউএসএআইডি দেবে ১০৪।সরকারকে এটি বাস্তবায়নে ও তদারকিতে কঠোক ভুমিকা পালন করতে হবে।সব মিলে সবার জরালো সচেতনতা সৃষ্টি করে সুন্দরবনকে রক্ষা করেই বাঘ রক্ষা করতে হবে।
মাসুম বিল্লাহ
লেখক ও সাংবাদিক
শিক্ষার্থী,উদ্ভিদ বিজ্ঞান, বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।