Dhaka ০৪:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাগেরহাট ব্যাংকে টাকা জমা রেখে বিপাকে দুই গ্রাহক, টাকা ফেরত চেয়ে সংবাদ সম্মেলন

  • Reporter Name
  • Update Time : ১১:১৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অগাস্ট ২০২৩
  • ১৯১ Time View

বাগেরহাট প্রতিনিধি

সোনালী ব্যাংক বাগেরহাট শাখায় রাখা টাকা ফেরত পাওয়ার দাবি করেছেন শেখ মোঃ জালাল উদ্দিন ও টিপু শেখ নামের দুই গ্রাহক। সোমবার (২১ আগস্ট) দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে টাকা ফেরত পাওয়ার আকুতি জানান তারা।
টাকা দাবি করা শেখ মোঃ জালাল উদ্দিন বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া এলাকার মৃত ওসমান গনি শেখের ছেলে। টিপু শেখ বাগেরহাট শহরের রেলরোড এলাকার মৃত মজিদ শেখের ছেলে।
শেখ মোঃ জালাল উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন কর্মচারী হিসেবে ২০১১ সালে আমি অবসরে যাই। পরে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে সোনালী ব্যাংক, বাগেরহাট শাখায় মাসে ৫ হাজার টাকা লভ্যাংশ পাওয়ার শর্তে ৫ লক্ষ টাকা ৫ বছরের জন্য জমা রাখি। জরুরী প্রয়োজনে ২০১৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর এককালীন ৪ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহন করি। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট ৩ লক্ষ টাকা এবং ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর ১ লক্ষ ৮৮ হাজার ৬০১ টাকা সর্বমোট ৪ লক্ষ ৮৮ হাজার ৬০১ টাকা দিয়ে সুধসহ সমুদয়ঋণ পরিষোধ করি। ২০১৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর আমার হিসেবের ৫ বছর পূর্ণ হলে টাকা উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে যাই। তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায় ব্যাংকে চুরির ঘটনা ঘটেছে, দুদকে মামলা চলছে এটা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত টাকা দেওয়া যাবে না। পরে টাকার জন্য দুদকসহ বিভিন্ন জায়গায় আমি ঘুরতে থাকি। সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একটি চিঠিতে জানায়, ২০১৩ সালে এবং ২০১৫ সালে ৪ লক্ষ টাকা করে পৃথক দুটি ঋণ নিয়েছি। দুটি ঋণের বিপরীতে ব্যাংক আমার কাছে ১২ লক্ষ ৪৯ হাজার ১৯৩ টাকা পাবে। মূলত এটা খুবই হাস্যকর কারণ, ব্যাংকে আমার জমা মাত্র ৫ লক্ষ টাকা, সেখানে ব্যাংক কেন আমাকে ৮ লক্ষ টাকা ঋণ দিবে। আমি ২০১৩ সালে যে ঋণ নিয়েছি, তা সুদসহ পরিশোধ করেছি। ব্যাংক আমার কাছে কোন টাক পায় না, বরং ব্যাকের কাছে আমার ৫ লক্ষ টাকা ৬ বছর ধরে পরে আছে। সুদসহ পুরো টাকা ফেরত চাই।২০১২ সালে মাসে ৫ হাজার টাকা জমা দেওয়ার শর্তে সোনালী ব্যাংক বাগেরহাট শাখায় দশ বছর মেয়াদী একটি ডিপোজিট (এমডিএস) করেছিলেন টিপু শেখ। জরুরী প্রয়োজনে ২০১৪ সালের সেপ্টম্বরে ডিপোজিটের বিপরীতে এক লক্ষ টাকা ঋণ গৃহন করেণ তিনি। ৫টি ধাপে ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৮৪৭ টাকা দিয়ে সুধসহ সমুদয়ঋণ পরিশোধ করেন তিনি। ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর এমডিএস-এর মেয়াদপূর্ণ হওয়ার এক সপ্তাহ পরে সুদসহ টাকা ফেরত পাওয়ার আবেদন করেন তিনি। একমাস পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী আপনি ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকার একটি ঋণ নিয়েছেন। যা পরিশোধ করেননি। এই ঋণ সুদসহ পরিশোধ করলে আপনার জমানো টাকা পাবেন। ২০২৩ সালের ১৪ মে ব্যাংক থেকে টিপু শেখকে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয় ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা ঋণ ২০১৬ সালের ১২ ফেব্রæয়ারী পর্যন্ত সুদসহ ১লক্ষ ৬৭ হাজার ৭২৭ টাকা হয়েছে। এর সাথে আরও ৬ বছরের সুদ যোগ করে তাকে ফেরত দিতে হবে।
আক্ষেপ করে টিপু শেখ বলেন, ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ব্যাংকে আমার জমা ছিল মাত্র ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। সেখানে ব্যাংক কিভাবে দুটি ঋণের বিপরীতে আমাকে দুই লক্ষ ৩৫ টাকা ঋণ দেয়। আসলে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে যে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা ঋণের কথা বলা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভুয়া। আমি ওই ঋণ গ্রহন করিনি। আমি যেকোন মূল্যে আমার সকল টাকা ফেরত চাই। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
সোনালী ব্যাংক, বাগেরহাট অঞ্চলের উপ মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সুকুমার রায় বলেন, টিপু শেখ যে ঋণের আবেদনে তার স্বাক্ষর হুবহু মিলে গেছে। এ কারণে ঋণের টাকা পরিশোধ করে তার জমানো টাকা ফেরত নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া কিছু জালিয়াতির ঘটনা ব্যাংকে ঘটেছিল, তা নিয়ে দুদকে মামলা চলমান রয়েছে। মামলাটি স্বাক্ষী পর্যায়ে রয়েছে। দুদক এবং আদালত থেকে সিদ্ধান্ত আসলে সমাধান হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য,২০১২ সালের ২ আগস্ট থেকে ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক বাগেরহাট শাখায় চার কোটি টাকা বেশি দূর্নীতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ব্যাংকের বাগেরহাট শাখা ব্যবস্থাপক খান বাবলুর রহমান ও দুদক পৃথক দুটি মামলা করেন। দুটি মামলায় একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা করাগারে ছিলেন। মামলা দুটি চলমান রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বোয়ালমারীতে চার বছর কর্মস্থলে না গিয়েও বেতন ভাতা নিচ্ছে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঝুমা !

বাগেরহাট ব্যাংকে টাকা জমা রেখে বিপাকে দুই গ্রাহক, টাকা ফেরত চেয়ে সংবাদ সম্মেলন

Update Time : ১১:১৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অগাস্ট ২০২৩

বাগেরহাট প্রতিনিধি

সোনালী ব্যাংক বাগেরহাট শাখায় রাখা টাকা ফেরত পাওয়ার দাবি করেছেন শেখ মোঃ জালাল উদ্দিন ও টিপু শেখ নামের দুই গ্রাহক। সোমবার (২১ আগস্ট) দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে টাকা ফেরত পাওয়ার আকুতি জানান তারা।
টাকা দাবি করা শেখ মোঃ জালাল উদ্দিন বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া এলাকার মৃত ওসমান গনি শেখের ছেলে। টিপু শেখ বাগেরহাট শহরের রেলরোড এলাকার মৃত মজিদ শেখের ছেলে।
শেখ মোঃ জালাল উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন কর্মচারী হিসেবে ২০১১ সালে আমি অবসরে যাই। পরে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে সোনালী ব্যাংক, বাগেরহাট শাখায় মাসে ৫ হাজার টাকা লভ্যাংশ পাওয়ার শর্তে ৫ লক্ষ টাকা ৫ বছরের জন্য জমা রাখি। জরুরী প্রয়োজনে ২০১৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর এককালীন ৪ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহন করি। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট ৩ লক্ষ টাকা এবং ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর ১ লক্ষ ৮৮ হাজার ৬০১ টাকা সর্বমোট ৪ লক্ষ ৮৮ হাজার ৬০১ টাকা দিয়ে সুধসহ সমুদয়ঋণ পরিষোধ করি। ২০১৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর আমার হিসেবের ৫ বছর পূর্ণ হলে টাকা উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে যাই। তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায় ব্যাংকে চুরির ঘটনা ঘটেছে, দুদকে মামলা চলছে এটা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত টাকা দেওয়া যাবে না। পরে টাকার জন্য দুদকসহ বিভিন্ন জায়গায় আমি ঘুরতে থাকি। সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একটি চিঠিতে জানায়, ২০১৩ সালে এবং ২০১৫ সালে ৪ লক্ষ টাকা করে পৃথক দুটি ঋণ নিয়েছি। দুটি ঋণের বিপরীতে ব্যাংক আমার কাছে ১২ লক্ষ ৪৯ হাজার ১৯৩ টাকা পাবে। মূলত এটা খুবই হাস্যকর কারণ, ব্যাংকে আমার জমা মাত্র ৫ লক্ষ টাকা, সেখানে ব্যাংক কেন আমাকে ৮ লক্ষ টাকা ঋণ দিবে। আমি ২০১৩ সালে যে ঋণ নিয়েছি, তা সুদসহ পরিশোধ করেছি। ব্যাংক আমার কাছে কোন টাক পায় না, বরং ব্যাকের কাছে আমার ৫ লক্ষ টাকা ৬ বছর ধরে পরে আছে। সুদসহ পুরো টাকা ফেরত চাই।২০১২ সালে মাসে ৫ হাজার টাকা জমা দেওয়ার শর্তে সোনালী ব্যাংক বাগেরহাট শাখায় দশ বছর মেয়াদী একটি ডিপোজিট (এমডিএস) করেছিলেন টিপু শেখ। জরুরী প্রয়োজনে ২০১৪ সালের সেপ্টম্বরে ডিপোজিটের বিপরীতে এক লক্ষ টাকা ঋণ গৃহন করেণ তিনি। ৫টি ধাপে ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৮৪৭ টাকা দিয়ে সুধসহ সমুদয়ঋণ পরিশোধ করেন তিনি। ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর এমডিএস-এর মেয়াদপূর্ণ হওয়ার এক সপ্তাহ পরে সুদসহ টাকা ফেরত পাওয়ার আবেদন করেন তিনি। একমাস পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী আপনি ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকার একটি ঋণ নিয়েছেন। যা পরিশোধ করেননি। এই ঋণ সুদসহ পরিশোধ করলে আপনার জমানো টাকা পাবেন। ২০২৩ সালের ১৪ মে ব্যাংক থেকে টিপু শেখকে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয় ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা ঋণ ২০১৬ সালের ১২ ফেব্রæয়ারী পর্যন্ত সুদসহ ১লক্ষ ৬৭ হাজার ৭২৭ টাকা হয়েছে। এর সাথে আরও ৬ বছরের সুদ যোগ করে তাকে ফেরত দিতে হবে।
আক্ষেপ করে টিপু শেখ বলেন, ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ব্যাংকে আমার জমা ছিল মাত্র ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। সেখানে ব্যাংক কিভাবে দুটি ঋণের বিপরীতে আমাকে দুই লক্ষ ৩৫ টাকা ঋণ দেয়। আসলে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে যে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা ঋণের কথা বলা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভুয়া। আমি ওই ঋণ গ্রহন করিনি। আমি যেকোন মূল্যে আমার সকল টাকা ফেরত চাই। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
সোনালী ব্যাংক, বাগেরহাট অঞ্চলের উপ মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সুকুমার রায় বলেন, টিপু শেখ যে ঋণের আবেদনে তার স্বাক্ষর হুবহু মিলে গেছে। এ কারণে ঋণের টাকা পরিশোধ করে তার জমানো টাকা ফেরত নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া কিছু জালিয়াতির ঘটনা ব্যাংকে ঘটেছিল, তা নিয়ে দুদকে মামলা চলমান রয়েছে। মামলাটি স্বাক্ষী পর্যায়ে রয়েছে। দুদক এবং আদালত থেকে সিদ্ধান্ত আসলে সমাধান হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য,২০১২ সালের ২ আগস্ট থেকে ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক বাগেরহাট শাখায় চার কোটি টাকা বেশি দূর্নীতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ব্যাংকের বাগেরহাট শাখা ব্যবস্থাপক খান বাবলুর রহমান ও দুদক পৃথক দুটি মামলা করেন। দুটি মামলায় একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা করাগারে ছিলেন। মামলা দুটি চলমান রয়েছে।