রাশেদ, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে এসএসসি পরীক্ষায় ১২৫৭ নম্বর পেয়ে উপজেলা সেরা হওয়া সাকিবুল হাসান সোহান পড়াশোনা নিয়ে চিন্তিত। তিনবার নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে বাস করেন সোহানের বাবা। টং ঘরে মনোহারি দোকান করে এতিম ছেলের পড়াশোনার খরচ নিয়ে চিন্তিত তিনি।
সোহান উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের হাসনাপাড়া গ্রামের হেলাল মাহমুদ বেপারির ছেলে। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ১২৫৭ নম্বর পেয়ে উপজেলায় শ্রেষ্ঠ হয়েছে সোহান। সে খোর্দ্দ বলাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। সোহানের বয়স যখন ৫ বছর তখন তার মা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ জনিত কারণে মারা যান। ৩ বার যমুনা নদী ভাঙনের ফলে ভিটেমাটি হারিয়ে সোহানের বাবা এখন বসতি গড়ে তুলেছেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে। দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের আগে সোহানের বাবার বাড়ি ছিল কাজলা কুড়িপাড়া চরে। সেখান থেকে যমুনা নদী ভাঙনের শিকার হয়ে তিনি বাড়ি করেন হাটশেরপুর ইউনিয়নের কামারপাড়ায়। সেখানে ১৫ বছরের বসতি গড়ে তোলার পর এ বসতবাড়িও তাদের যমুনা নদী ভাঙনের শিকার হয়। এরপর জমাজমি ভিটেমাটি সবকিছু হারিয়ে তারা আশ্রয় নেন একই ইউনিয়নের হাসনাপাড়া গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে। এখানেই সোহানের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। নিরুপায় সোহানের বাবা হেলাল আগে সাইকেলে করে বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রী বিক্রি করে সংসার চালাতেন। এরপর তিনি তার বাড়ির পাশেই বেড়িবাঁধের উপর একটি টং দোকান ঘর করে সেখানে মনোহরী জিনিসপত্র বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। এদিকে উপজেলায় শ্রেষ্ঠ সোহান বুয়েটে পড়াশোনা করতে চায়। তার মা বাবার সংসারে অভাব অনটনের জন্য সে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে।
সোহান বলেন, আমার ইচ্ছা ছিল আমি বুয়েটে পড়াশোনা করবো। কিন্তু আমার গরীব বাবার আয় দিয়ে সে স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা জানি না।
সোহানের বাবা হেলাল মাহমুদ বলেন, আমার গরীব ঘরে আমার ছেলে এতো সুন্দর রেজাল্ট করেছে তার জন্য আমি খুবই খুশি। তিনবার নদী ভাঙনের পর আশ্রয় নিয়েছি বেড়িবাঁধে। ছোট একটি দোকানের আয় দিয়ে সংসার চালানোই মুশকিল। এমতাবস্থায় ছেলের পড়াশোনা চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
খোর্দ্দ বলাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাফি বলেন, সোহানের পরিবারের আর্থিক অবস্হার কথা চিন্তা করে তাকে বিদ্যালয়ের সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। উচ্চ শিক্ষার জন্য তার দেশের হিতাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তিদের সহযোগিতার প্রয়োজন।
সোহানকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে উপজেলা প্রশাসন থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তৌহিদুর রহমান।