মেহেরপুর প্রতিনিধি:
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার শালদহ-আনান্দবাস-রাধানগর-বেড় (এস,এ,আর,বি) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী না থাকা সত্ত্বেও ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে (ক) শাখার পাশাপাশি (খ) শাখা খোলা হয়েছে। যেখানে খাতা কলমে (খ) শাখার অনুমোদন থাকলেও বাস্তবে নেই কোন কার্যক্রম। সরেজমিনে এস,এ,আর,বি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে এমন দৃশ্যই চোখে মেলে। ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির (খ) শাখার কোন ক্লাস রুম, বেঞ্চ এমনকি পাঠদানের কোন সরঞ্জামের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। উক্ত শ্রেনিতে ৩২ জন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি পাওয়া যায়। অথচ এ দু’টি শ্রেণির অতিরিক্ত শাখার জন্য হামিদুল ইসলাম ও মিফতাহুল জান্নাত নামে দু’জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কোন পাঠদান ছাড়াই এ দু’জন শিক্ষক সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছেন। কয়েকদিন পূর্বে সাংবাদিকগণ বিদ্যালয়ে তথ্য সংগ্রহে গেলে প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে সহকারী শিক্ষকের কয়েকজন (খ) শাখার জন্য দু’জন শিক্ষকের বিষয়ে মানবিক দিক বিবেচনায় কিছু না লেখার অনুরোধ জানান। একই সাথে এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে আলাপের জন্য জানান।
তথ্য অনুযায়ী, নতুন শিক্ষানীতির কারণে চলতি বছর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে একটি শাখায় ৫৫ জনের বেশি ভর্তি করা যাবে না। যেসব মাধ্যমিক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শাখা অনুমোদন রয়েছে সেসব স্কুলে ৫৫ জন করে দু’টি শাখায় ১১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবেন। আর যেসব স্কুলে শাখা নেই, সেসব স্কুলে শুধুমাত্র ৫৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবেন। এ কারণে অধিকাংশ মাধ্যমিক স্কুলে শাখা না খোলায় শিক্ষার্থীরা প্রত্যাশিত স্কুলে ভর্তিতে ভোগান্তিতে পড়েছে। অপরদিকে এস,এ,আর,বি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শাখার প্রয়োজন না হওয়া সত্ত্বেও (খ) শাখা খোলা হয়েছে এবং দু’জন শিক্ষক অফিসে বসে থেকে সরকারি বেতন উত্তোলন করছেন, যা নিয়ে একালাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখ্য, উক্ত দু’জন শিক্ষকের মধ্যে মিফতাহুল জান্নাত ১০ জুন-২০০৯ সালে ব্যক্তিগত সমস্যা দেখিয়ে সহকারী শিক্ষকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিলেও বিদ্যালয় এমপিও ভুক্ত হওয়ার পর থেকে এখন অবধি বিদ্যালয়ে নিজ দায়িত্বে বহাল রয়েছেন।
এবিষয়ে তিনার কাছে জানতে চাওয়া হলে ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে রাজি না হলেও জানান, তিনার সাক্ষর জালিয়াতি করে তাকে অব্যাহতি দেখানো হয়েছে। কথা হচ্ছে, তিনি যদি অব্যাহতি না নিয়েই থাকেন তবে ২২ জানুয়ারি-২০১৯ সালের চুড়ান্ত ভোটার তালিকায় মিফতাহুল জান্নাতের নাম কিন্তু দেখা যায়নি তবে ২৮ সেপ্টেম্বর-২০২২ শিক্ষক তালিকায় তিনার নাম রয়েছে। এ সংক্রান্ত তথ্য সাংবাদিকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
এদিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল ইসলামের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ছাদিয়া নামের এক শিক্ষার্থীকে আর্থিক প্রলোভনসহ শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেওয়ার কারণে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীর অভিভাবক। এমনই ঘটে দীপা নামে আরও একজন শিক্ষার্থীর সাথে যেটি স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করা হয়। আরেকজন শিক্ষার্থী একই ঘটনায় বিদ্যালয় ছেড়ে চুয়াডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এমন যদি হয় প্রধান শিক্ষকের চরিত্র তবে অভিভাবকগণ কিভাবে পাঠাবে তাদের সন্তানদের এমন বিদ্যালয়ে। এ নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। তাছাড়া প্রধান শিক্ষকের এমন চরিত্রের কারণেই নাকি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে এমনও গুঞ্জন রয়েছে।
আরও অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক এনামুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১৮ জুন-২০২১ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও সভাপতি সুন্নত আলীর সাক্ষর জালিয়াতি করে ১৮ জুন-২০২১ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর-২০২১ পর্যন্ত ১ লক্ষ ৫১ হাজার ৫০৬ টাকা শিক্ষকদের বেতন উত্তোলন করেছেন। যার সত্যতা সাবেক ঐ সভাপতিকে ফোন করে জানা গেছে। সভাপতি সাক্ষর করেননি এমনকি এ বিষয়ে অবগত নয় বলে জানান। তবে প্রধান শিক্ষক সাক্ষর জালিয়াতি করে বেতনের টাকা উত্তোলন করে শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয়েছে বলে দাবী করেন। এসময় (খ) শাখা বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে গাংনী উপজেলায় এমন অসংখ্য বিদ্যালয় রয়েছে বলে জানান। এমন নানা অভিযোগ ও অনিয়মের কথা লোকমুখে যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে বলে এলাকাবাসীর অনেকে জানান।
বিষয়টি নিয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে ফোন করা হলে তিনি বিষয়গুলি সম্বন্ধে অবগত নন। খোঁজ খবর নিয়ে এর সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
শিরোনাম :
মেহেরপুরে এস,এ,আর,বি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নানা অনিয়ম
- Reporter Name
- Update Time : ০৪:৫৪:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ জুলাই ২০২৪
- ১১৩ Time View
Tag :
আলোচিত